আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কোম্পানির ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডের (ডব্লিউপিপিএফ) অবদানের ওপর কর দেওয়ার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা দেশে কার্যরত কোম্পানিগুলোর আয়করের বোঝা ও কার্যকর করের হার বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছে ফরেইন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।
গতকাল অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এ ধরনের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন ফিকি’র নেতারা। রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দেওয়ার মতো করে ডব্লিউপিপিএফ অবদানকে অগ্রহণযোগ্য ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, এটি কর্মীদের সুবিধার জন্য একটি সংবিধিবদ্ধ পারিশ্রমিক। এটি আইন অনুযায়ী কর-পূর্ব মুনাফা থেকে প্রদান করা হয়। দীর্ঘদিন্ন ধরে সরকার একটি করবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে চাইছে। এই ধরনের করারোপ তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়া এই প্রস্তাব ২০০৬ সালের শ্রমিক আইন দ্বারা গঠিত বিধানের পরিপন্থী।
ফিকির নেতারা মনে করেন, এই বিধানটিকে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৩০তম ধারার পরিবর্তে ২৯তম ধারায় অনুমোদিত ব্যয় হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত করা উচিত। তা না করা হলে, ডাব্লিউপিপিএফ-এর ব্যয় দুইবার করের আওতায় পড়বে।
তারা বলছেন, ডব্লিউপিপিএফকে একটি ব্যয় হিসেবে অনুমোদন না করা দ্বিগুণ করের সমান। কারণ কর্মচারী ও নিয়োগকর্তা উভয়কেই এর ওপর কর দিতে হবে। এই করারোপ বাংলাদেশে ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে আরও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।
সম্মেলনে শর্তসাপেক্ষে ২.৫ শতাংশ করপোরেট কর কমানোর ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করে ফিকি। প্রস্তাবিত বাজেটে আইপিও-এর মাধ্যমে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের প্রচলন করা কিছু নির্দিষ্ট ধরনের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এই করছাড় উপভোগ করতে পারবে। ফিকির প্রস্তাব, এধরনের ছাড় পেতে শর্তটি সংশোধন করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কমপক্ষে ১০ শতাংশ শেয়ার অবশ্যই জনগণের হাতে থাকতে হবে এমন বিধান করা উচিত। করপোরেট কর ছাড়ের ক্ষেত্রে সমস্ত রসিদ অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ফিকি এই বিধানটি সংশোধন করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব দিয়েছে। একইসঙ্গে, ১২ লাখ টাকার বেশি সব বিনিয়োগ ও খরচ অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পরিশোধের বিষয়ে ফিকির মতামত, করপোরেট খরচের অন্তত ১০ শতাংশ নন-ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রদান করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
ফিকির প্রেসিডেন্ট ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘বর্তমানে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাজেট প্রস্তাব করার প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে কিছু প্রগতিশীল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, যা ব্যবসা করা সহজ করে তুলবে। তবে বাজেটের কিছু বিধানের ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধিকে মন্থর করে দিতে পারে। এটি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকে আরও নিরুৎসাহিত করতে পারে।’
তিনি বলেন, শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, কোম্পানির নিট মুনাফা থেকে ডব্লিউপিপিএফ দেওয়া হয়। যাকে আইনে কর-পূর্ব মুনাফা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের জন্য কর দিতে হবে।